শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন
বানারীপাড়া প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে সন্ধ্যা নদীতে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ভাঙন পাড়ের হাজারো নারী-পুরুষের প্রতিরোধের মুখে পড়েন বালু মহাল ইজারা পাওয়া মুসলিম ট্রেডার্সের প্রতিনিধি এস এম মনির, সবুর, ছিরন ও আবু হুরায়রা আকন সহ কয়েকজন।
জানা গেছে শুক্রবার সকাল থেকে মুসলিম ট্রেডার্সের প্রতিনিধি এস এম মনির হোসেন লোকজন নিয়ে সন্ধ্যা নদীর জিরারকাঠি ও বাইশারী পয়েন্টে বালু উত্তোলণ করতে থাকেন। খবর পেয়ে নদীর ভাঙনকবলিত দুই পাড়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে জিরারকাঠি পয়েন্টে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এসময় জনতার রোষানলে পড়েন বালুতুলতে যাওয়া লোকজন। খবর পেয়ে বানারীপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করেন । এসময় তারা পুলিশকে বালু উত্তোলনে ইজারার কার্যাদেশ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন আটক করা হয়।বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে জনস্বার্থে বালু মহাল ইজারা বন্ধের দাবীতে বৃহস্পতিবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের বিহারীলাল একাডেমি ও পূর্ব ইলুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার সর্বস্তরের হাজারো মানুষ এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করেন। ১৯ আগস্ট বরিশাল জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের চিঠি উপেক্ষা করে ভাঙন কবলিত বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর বালু মহাল ইজারা দিলে ওই দিনই জনস্বার্থে এর বিরুদ্ধে ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন।
এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দুই বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বেঞ্চ পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব,ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব, বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব),পুলিশ সুপার,বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও ওসির কাছে জবাব চেয়ে নোটিশ প্রধান ও বালু মহাল ইজারার ওপর দুই মাসের স্থগিতাদেশ দেন। হাইকোর্টের ওই স্থগিতাদেশ বহাল থাকার মধ্যেই আদালত অবমাননা করে বালু উত্তোলন শুরু করা হয়।
প্রসঙ্গত সন্ধ্যা নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার।সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর মানবেতর জীবন।অনিয়মতান্ত্রিক বালু উত্তোলনের ফলে রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করে।বালু দস্যুদের কারনে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিন নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাক্ষ¥নকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি,
খোদাবখসা, কালির বাজার,চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক হাজারো একর ফসলি জমি,অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট,ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ ও মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে।হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম।
উল্লেখিত গ্রামগুলো মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রাম গুলো বাস্তবে নেই। বালু উত্তোলনের কারনে ভেঙ্গেছে নদী, পুড়েছে কপাল, কাঁদছে হাজারো মানুষ। আর কপাল খুলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল। গত জানুয়ারী মাস থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর ভাঙন কিছুটা কমে এসে জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়।
Leave a Reply